এ আয়োজন সার্কভুক্ত দেশগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ঘিরে উৎসবের নগরী হবে ঢাকা। থিমভিত্তিক নানা অনুষ্ঠান, অডিওভিজুয়্যাল, সাংস্কৃতিক আয়োজন পালটে দেবে রাজধানীর চির চেনা রূপটি।

টানা ১০ দিনব্যপী বিশাল আয়োজনের প্রস্তুতি প্রায় চূড়ান্ত। উৎসবের মুকুটে পালক যোগ করতে বাংলাদেশে আসছেন পাঁচ রাষ্ট্রনায়ক। ১৭ মার্চ থেকে ২৬ মার্চের মধ্যে নানা সময়ে তারা ঢাকা সফর করবেন।

উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্যেই বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে পাঁচ রাষ্ট্রনায়ক নানা ইস্যু নিয়ে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন। এতে স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা হবে।

এ সময় বিভিন্ন বিষয়ে সমঝোতা স্মারকসহ কিছু চুক্তিও হতে পারে। এর বাইরে ভিডিও বার্তায় যুক্ত হবে আরও অনেক দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।

এই আয়োজন ঘিরে আসছেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহামেদ সলিহ, নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী ভান্ডারী, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, শ্রীলংকার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং।

ভিডিওবার্তায় উপস্থিত থাকবেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইউশিহিদে সুগা, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী চুং স্যু-কুয়েন, কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন সেন, ওআইসির সেক্রেটারি জেনারেল ড. ইউসেফ আহমেদ আল-ওথাইমিন, ইউনেস্কোর মহাপরিচালক ইরিনা বোকাভা, পোপ ফ্রান্সিস ও মুক্তিযুদ্ধের বিদেশি বন্ধু তাকাশি হাওয়াকাওয়ার পুত্র ওসামু হাওয়াকাওয়া। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনে তারাও একাত্ম হবেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন শনিবার গণমাধ্যমকে বলেন, পাঁচটি দেশের রাষ্ট্রনায়করা আসছেন। অনেক চুক্তি হবে। ভারতের সঙ্গেও চুক্তি হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো তিনি (নরেন্দ্র মোদি) আসছেন।

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশ, আমাদের সবচেয়ে বড় প্রতিবেশী দেশের নেতা আসছেন। ভারতের সঙ্গে আমাদের সবসময় আলোচনা হচ্ছে। কয়েক দিন আগে তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসেছিলেন, তখন কথা হয়েছে।

এ ছাড়া সচিব পর্যায়ে নিয়মিতই আলোচনা হচ্ছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু বাণিজ্য, সীমান্ত হত্যা নিয়ে কথা হয়েছে। গত কয়েক দিন ধরে এসবই হচ্ছে। এ আয়োজন সার্কভুক্ত দেশগুলোর জন্যও গুরুত্বপূর্ণ বলে তিনি উল্লেখ করেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা বড় ধরনের উৎসবে মিলিত হব। আর এই উৎসব মূলত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উদযাপন ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকে ঘিরে।

মুখ্য তথ্য কর্মকর্তা সুরৎ কুমার সরকার জানান, আমন্ত্রিত বিদেশি অতিথিদের মধ্যে পাঁচ দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান আলাদা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।

মার্চ মাসের তৃতীয় সপ্তাহে বিদেশি রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানগণ ভিন্ন ভিন্ন তারিখে বাংলাদেশে আসবেন এবং তারপর দেশে ফিরে যাবেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের মূল অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।

এ অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া ছাড়াও তিনি টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর গ্রাম ও সমাধি পরিদর্শন করবেন। এ ছাড়া তিনি গোপালগঞ্জ ও সাতক্ষীরায় দুটি হিন্দু মন্দির পরিদর্শন করবেন। মন্দিরগুলো বিশেষত হিন্দু মাতুয়া সম্প্রদায়ের প্রার্থনার স্থান।

সফরসূচি অনুযায়ী, সব বিদেশি নেতা মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধ পরিদর্শনে যাবেন। বিশেষ সামরিক কুচকাওয়াজ প্রত্যক্ষ করবেন, রাষ্ট্রীয় ভোজসভায় অংশ নেবেন এবং বঙ্গবন্ধু জাদুঘর পরিদর্শন করবেন।

মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহামেদ সলিহ প্রথম শীর্ষ বিদেশি আমন্ত্রিত অতিথি হিসাবে ১৭ মার্চ ঢাকায় পৌঁছবেন। তিনি তিন দিনের সফরে বাংলাদেশে আসছেন।

এরপর ১৯ মার্চ দুই দিনের সফরে শ্রীলংকার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে বাংলাদেশে আসবেন। নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী ভান্ডারী দুদিনের সফরে ২২ মার্চ ঢাকা পৌঁছবেন।

ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং ২৪ ও ২৫ মার্চ ঢাকা সফর করবেন। মোদি ২৬ মার্চ বাংলাদেশ পৌঁছে পরের দিন দেশে ফিরবেন।

এদিকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে ‘মুজিব চিরন্তন’ প্রতিপাদ্যে ১০ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি এ উদ্যোগ নিয়েছে।

আগামী ১৭ থেকে ২৬ মার্চ এ বিশেষ অনুষ্ঠান স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে আয়োজন করা হবে। প্রতিদিন সেখানে থিমভিত্তিক নানা আয়োজন থাকবে। থিমগুলো হলো ১৭ মার্চ ‘ভেঙেছ দুয়ার এসেছো জ্যোতির্ময়’, ১৮ মার্চ ‘মহাকালের তর্জনী’, ১৯ মার্চ ‘যতকাল রবে পদ্মা যমুনা’, ২০ মার্চ ‘তারুণ্যের আলোক শিখা’, ২১ মার্চ ‘ধ্বংসস্তূপে জীবনের গান’, ২২ মার্চ ‘বাংলার মাটি আমার মাটি’, ২৩ মার্চ ‘নারীমুক্তি, সাম্য ও স্বাধীনতা’, ২৪ মার্চ ‘শান্তি-মুক্তি ও মানবতার অগ্রদূত’, ২৫ মার্চ ‘গণহত্যার কালরাত্রি ও আলোকের অভিযাত্রা’ এবং ২৬ মার্চ ‘স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর ও অগ্রগতির সুবর্ণরেখা’। ১০ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে ১৭, ২২ ও ২৬ মার্চ রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং ১৭, ১৯, ২২, ২৪ ও ২৬ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত থাকবেন। এই পাঁচ দিনের অনুষ্ঠানে বিদেশি রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরা অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন।

সারা দুনিয়ার রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের কন্ট্রাক্ট নেইনি : পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন বলেছেন, আন্দামান সাগরে ভাসমান রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে বাংলাদেশ রাজি নয়। কারণ সারা দুনিয়ায় অসুবিধায় পড়া রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনে দায়িত্ব (কন্ট্রাক্ট) আমরা নেইনি। শনিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের জলসীমা থেকে অনেক দূরে অবস্থান করছে। অপরদিকে- মিয়ানমার, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ভারত থেকে তাদের নৌকা অনেক কাছে অবস্থান করছে। তাহলে এ দায় আমরা নেব কেন? তিনি আরও বলেন, যখনই সাগরে ভাসমান রোহিঙ্গাদের পাওয়া যায় তখনই তাদের কাছে ইউএনএইচসিআরের কার্ড পাওয়া যায়। তাদের কার্ড নিয়ে রোহিঙ্গারা কেন চলে যায়, সে ব্যাপারে ইউএনএইচসিআরকে জিজ্ঞাসা করুন। আর যে জাহাজে রোহিঙ্গারা রয়েছে সেটি আমাদের দেশের নয়, সেটি থাইল্যান্ডের জাহাজ।